বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

 টিকা ও কল্যাণমুখী রাজনীতি

  • মো. শফিকুল ইসলাম   
  • ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৫:২০

এখন টিকা নিয়ে রাজনৈতিক মহলটি একেবারেই নিশ্চুপ হয়ে গেছে। অথচ রাজনৈতিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে চিন্তা করলে তাদের দায়িত্ব ছিল, মানুষকে টিকা নেয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা, ঐক্যবদ্ধ করা। করোনার টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে সফলতা, তা সাধারণ মানুষকে জানিয়ে তাদের টিকা নেয়ার বিষয়ে অনুপ্রাণিত করাই হতে পারত তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি। সরকারের পাশে থাকার জন্য সবাইকে আহ্বান জানালে, সেটাও রাজনীতিতে একটা নতুন মাত্রা যোগ হতে পারত।

টিকা নিয়ে রাজনীতি হতে পারে, তা আগেই ধারণা করা গিয়েছিল। অবশেষে তা-ই দেখা গেলো। টিকা আবিষ্কার করলো যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড, উৎপাদন করল ভারতের সেরাম। সেই টিকা কেনার চুক্তিও হয়েছে। অবশ্য ভারত সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ দেখিয়ে বর্তমান বাংলাদেশকে কিছু টিকা ‘উপহার’ দিয়েছে। চুক্তি অনুসারে ৫০ লাখ টিকা দিয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। এ নিয়ে অনেক রাজনীতি হয়েছে যে টিকা দেবে না, সময়মতো পাওয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তবে এর ব্যতিক্রম হয়েছে। ভুল ধারণা ভেঙে গেছে। তারপরও এটি নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। সরকারের বিরোধীপক্ষ এটা ভাবছে না যে, বিশ্বের অনেক দেশ এখনও টিকা পায়নি, বাংলাদেশ সেই টিকা অনেক আগে পেয়েছে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কয়েক লাখ মানুষ টিকা নিয়েছে। টিকাদানে বাংলাদেশ যে দারুণ সাফল্য দেখালো, তা প্রশংসনীয়। এ জন্য সরকার ধন্যবাদ আশা করতেই পারে।

একটি মহল প্রশ্ন তুলেছিল, ‘ভ্যাকসিন সাধারণ মানুষ পাবে কি না তা কোনো রোডম্যাপে নেই, কোনো প্ল্যানিংয়ে নেই। বলছে, আগে ২০ লাখ আসবে। এই ২০ লাখ কারা পাবে -সেটা মানুষ জানে না। প্রতি মাসে নাকি ৫০ লাখ করে আসবে, সেটা কারা পাবে তাও মানুষ জানে না। সাধারণ মানুষ, আমরা কখন পাব, না পাব তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’ ওই রাজনৈতিক মহলের সব বক্তব্যই ভুল প্রমাণিত হলো। এখন সাধারণ মানুষ টিকা নিতে পারছে, কোনো জটিলতা নেই।

এখন টিকা নিয়ে রাজনৈতিক মহলটি একেবারেই নিশ্চুপ হয়ে গেছে। অথচ রাজনৈতিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে চিন্তা করলে তাদের দায়িত্ব ছিল, মানুষকে টিকা নেয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা, ঐক্যবদ্ধ করা। করোনার টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে সফলতা, তা সাধারণ মানুষকে জানিয়ে তাদের টিকা নেয়ার বিষয়ে অনুপ্রাণিত করাই হতে পারত তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি। সরকারের পাশে থাকার জন্য সবাইকে আহ্বান জানালে, সেটাও রাজনীতিতে একটা নতুন মাত্রা যোগ হতে পারত।

আমাদের দেশে টিকার সঠিক বণ্টন হয়েছে। টিকাদান শুধু রাজধানী-কেন্দ্রিক করা হয়নি, সব জেলা-উপজেলায় সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়েছে। টিকা প্রয়োগ হচ্ছে। সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়েছে, এটা ভালো উদ্যোগ ছিল । অন্যথায় হয়ত আরও দেরিতে টিকা আসতো। আরও সুসংবাদ হলো, টিকার দ্বিতীয় চালান চলতি মাসের ২২ তারিখে আসতে পারে এবং টিকার পরিমাণ হতে পারে ২০-২৫ লাখ ডোজ।

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো তাদের উৎপাদিত টিকা সফল বলে প্রমাণ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে; যেখানে ক্ষমতা ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে যেন প্রভাব থাকে সেই চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক শক্তির বিষয়টি জড়িত। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশ এই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এসবের মধ্যে আমরা যে অন্যান্য দেশের আগে টিকা পেয়েছি, এতে প্রমাণ হয় সরকারের সঠিক পরিকল্পনা। সরকার করোনা নিয়ে যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিল।

বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এখন পরিচিত এক নাম, অধিকাংশ মানুষই লাল সবুজ পতাকার এই দেশকে জানেন, চেনেন। এই পরিচয়, পৃথিবীর মাঝে আমাদের এই অস্তিত্ব ও অগ্রসরমাণ পরিচিতি সম্ভব হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার কারণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার প্রতীক। তিনি সর্বদা সুখে দুঃখে মানুষের পাশে দাঁড়ান। টেকনাফের মামুন শেখ হাসিনার মোবাইলে খুদে বার্তা প্রেরণ করলে আগের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী মামুনের পরিবারকে ঘর করে দিতে এলাকার জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেন।

এখন মামুনের মুখে খুশির হাসি। এ ধরনের কাজ, মানুষের পাশে থাকার এই প্রচেষ্টা, আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও, আদতে খুবই ইতিবাচক এবং প্রশংসনীয়, কারণ তা একজন ব্যক্তিমানুষের জন্য তার দরদকেই প্রকাশ করে। এজন্যই তিনি হলেন ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ।

অতীতে বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত করেছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাক্সিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন জিএভিআই বোর্ডের চেয়ার নগচি ওকোনজো-আইয়েলা। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচিতে ব্যাপক সফলতা, পোলিও নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং ডিপথেরিয়া, হেপাটাইসিস বি-এর মতো ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর অবদান রাখায় শেখ হাসিনার প্রশংসা করে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। এই পুরস্কার তাদের দেওয়া হয় যারা শিশুর জীবন রক্ষার জন্য জরুরি টিকাদানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় এবং সব শিশু যাতে টিকা পায়, তা নিশ্চিত করতে কাজ করে। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বলা হয়, ‘শুধু টিকাদান কর্মসূচি নয়, শিশু ও নারীর অধিকার আদায়ে শেখ হাসিনা একজন সত্যিকারের সফল রাষ্ট্রনায়ক।’ সম্মাননা পাওয়ার পর শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ পুরস্কার আমার না। এটা বাংলাদেশের জনগণকে আমি উৎসর্গ করলাম।’

পরিশেষে বলতে চাই টিকা নিয়ে গুজব নয়, বরং টিকা নিয়ে বর্তমান সরকার যা করছে , তাতে প্রমাণ হয় প্রধানমন্ত্রীর সকল পরিকল্পনা কল্যাণমুখী রাজনীতি ও দিকনির্দেশনার বহিঃপ্রকাশ।

লেখক: সাবেক সভাপতি- শিক্ষক সমিতি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।

এ বিভাগের আরো খবর